সর্বশেষ আলোচনা

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

***মেধা নেই এমন অজুহাতে কোন কাজ থেকে পালাবেন না, লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই।***

দাপ্তরিক কাজে ভদ্রতা,নৈতিকতা ও শিষ্টাচার

 শিষ্টাচার;ভদ্রতা;স্লাইড শো; নৈতিকতা; morality; শিষ্টাচার etiquette; ভদ্রতা;নম্রতা; morality; etiquette; ethics;


দাপ্তরিক কাজে ভদ্রতা,নৈতিকতা ও শিষ্টাচার


ভদ্রতা 

ভদ্রতা (Politeness, Courtesy, Goodness, Gentlemanliness) অদ্রতা মানুষের কিছু আচরণের সমষ্টি বা আচার-ব্যবহারের এখন একটা রূপ বা এখন কোন কর্মপদ্ধতি, যা সমাজ সাধারণত স্বীকৃতি দেয়।



নৈতিকতা

নৈতিকতা (Morality) (ল্যাটিন শব্দ mōrālitās' থেকে অগত, যার অর্থ সঠিক আচরণ) হল ভাল বা সঠিক এবং খারাপ বা ভুল বিষয়সমূহের মাঝে পার্থক্য ও পৃথককরণ। নৈতিকতাকে একটি আদর্শিক মানদন্ড বলা যেতে পারে যা বিভিন্ন অঞ্চলের সামজিকতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আবার অনেক ক্ষেত্রে, সামগ্রিকভাবে সমগ্র পৃথিবীর জন্য কল্যাণকর বিষয়সমূহকেও নৈতিকতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

“তুমি যদি অন্যায় করো, মিথ্যে বলো, তাহলে বিবেক তোমাকে চিরদিন দংশন করবে”

মনে রাখবেন,

'God may forgive our sin but the nervous system never does'.


শিষ্টাচার

শিষ্টাচার (Etiquette) হলো বিশেষ পেশায় বা সমাজের বিশেষ স্তরে প্রচলিত আদব-কায়দা, নম্র আচরণ | Oxford Advanced Learner's Dictionary একে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে the formal standards or rules of correct and polite behavior in society or among members of profession. এটি সময় ও স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।


শিষ্টাচার হচ্ছে একটি সুসংবন্ধ নিয়মাবলী যার মাধ্যমে সামাজিক ও সরকারি পরিমগুলের আচার-আচরণের পরিশীলিত রূপকে বুঝায়। সহজভাবে শিষ্টাচার বলতে আমরা একজন ব্যক্তির গলীন, শোভন, গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসনীয় আচার-আচরণকে বুঝে থাকি। একজন ব্যক্তি যখন অপর একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সাথে মিলিত হবেন তখন তিনি ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী আচরণ করবেন।


দাপ্তরিক কাজে সরকারি কর্মচারীদের নানারূপ নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। এছাড়াও একজন মানুষকে অন্যের দৃষ্টিতে শিষ্ট, ভদ্ররূপে উপস্থাপন করতে সমাজে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বাধ্যবাকতা মেনে চলতে হয়। এরূপ বিধিবদ্ধ নিয়মসমূহকেই শিষ্টাচার বলে।


শিষ্টাচারের উৎপত্তি

শিষ্টাচারের ইংরেজি Etiquette' শব্দটি প্রাচীন ফরাসী শব্দ। "Estiquer' শব্দটি হতে উদ্ভুত হয়েছে। যার অর্থ দিনের পালনীয় নিয়মাবলী'। ফ্রান্সে 'Etiquette' বা শিষ্টাচার বলতে আচার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকারী বিধিমালাকে বুঝায়। ইংরেজি ভাষাভাষী দেশসমূহে শিষ্টাচার বলতে অনুষ্ঠাননি পরিচালনার নিয়মাবলী কিংবা সাধারণ সামাজিক প্রথাসমূহকে বুঝায়। Lord Chesterfield সর্বপ্রথম 'Etiquette' শব্দটি ব্যবহার করেন।


শিষ্টাচারের প্রকারভেদ

শিষ্টাচার কে দু'ভাগে ভাগ করা যায়–

★ সামাজিক শিষ্টাচার, এবং

★ দাপ্তরিক শিষ্টাচার


সামাজিক শিষ্টাচার

সমাজে চলতে গেলে যে  ধরনের শিষ্টাচার পালন করা উচিত— 

  • গুরুজন ও মুরব্বীদের সম্মান করা।
  • ছোটদের সাথে স্নেহাস্পদ আচরণ করা।
  • প্রতিবেশিদের সাথে ভাল আচরণ করা।
  • অভ্যাগতদের সাথে ভাল আচরণ করা।
  • মেহমানদের সাথে ভাল আচরণ করা।
  • সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ প্রদান করা।
  • কোন অনুষ্ঠানে গেলে শালীন ও শোভন পোশাকে যাওয়া।
  • সময়মত যেকোন অনুষ্ঠানে যাওয়া।
  • অসময়ে কারো বাসায় ফোন না করা।
  • হুট করে কারো বাসায় না যাওয়া।
  • হোটেল-রেটুরেন্টে খেলে ভদ্র, নম্র ও শালীন ব্যবহার করা।
  • বাসে ট্রেনে ভ্রমণকালে নারী ও মুরব্বিদের সাথে উত্তম ব্যবহার।


দাপ্তরিক শিষ্টাচার

সরকারি বেসরকারি বা যেকোন দপ্তরে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে পালনীয় আচরণসমূহকে দাপ্তরিক শিষ্টাচার বলে৷


দাপ্তরিক শিষ্টাচারসমূহ--


সাধারণভাবে পালনীয় বিষয়াবলী–

  • চাকরির আচরণ বিধি মেনে চলা।
  • সিনিয়রদের প্রতি বিনয়ী আচরন করা।
  • সময়মত অফিসে আসা ও নির্ধারিত সময়ের আগে
  • অফিস ত্যাগ না করা।
  • নির্ধারিত স্থান ব্যতীত যেখানে সেখানে ধূমপান না করা।
  • কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ পালন করা
  • আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা পরিহার করা
  • মুদ্রাদোষ(দাঁত দিয়ে নখ কাটা, বারবার হাত-পা কিংবা মাথা ঝাঁকানো, অযথাই নাক বা কান পরিষ্কার, অপ্রয়োজনীয় কথা বারবার বলা) পরিহার করা।
  • অতিরিক্ত কথা বলা হতে বিরত থাকা।
  • ঝগড়া বিবাদ হতে বিরত থাকা।
  • সময়ের কাজ সময়ে করা।
  • অফিসে অহেতুক গল্প-গুজৰ না করা।
  • ব্যক্তিগত সমস্যা অফিসে না বলা।
  • অন্যের কক্ষে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ না করা।
  • অন্য অফিসের কেউ আসলে তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।
  • অস্বাভাবিকভাবে হাত নেড়ে কথা না বলা।
  • নাক/কান খোঁচানো বা নখ না কাটা।
  • হাত মিলানোর সময় সিনিয়র হাত না বাড়ালে জুনিয়র আগে হাত না বাড়ানো।
  • পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনদের অফিসে না আনা।
  • সিনিয়রদের সাথে কথা বলার সময় পকেটে হাত ঢুকিয়ে না।
  • নিজের কাজের অধিক প্রচারণা হয়ে বিব্রত থাকা।
  • সবকিছুকেই দোষ ধরা হতে বিরত থাকা।
  • অযথা ৰকানকি কিংবা চিৎকার চেঁচামেচি হতে বিরত থাকা।
  • অধস্তন কর্মচারীদের অভিসম্পাত না করা।
  • শান্তভাবে অথচ দৃঢ়তার সাথে আদেশ করা।
  • অধস্তনদের সাথে অতিমাত্রায় সহজ বা কঠোর না হওয়া
  • নিম্ন অক্ষমতার কথা সকলকে না বলে বেড়ানো
  • না চাইতে কোথাও কখনও নানা করা।
  • স্বজনপ্রীতি দেখাবেন না।
  • উধ্বর্তন কর্মকর্তা আপনার দোষ ধরলে তাকে মেজাজ দেখাবেন না।
  • বাইরের কারো সাথে আপনার অফিসের বিষয় আলোচনা হতে বিরত থাকুন।
  • চাকরির বিষয়ে বাড়িতে আলাপ-আলোচনা হতে বিরত থাকা।
  • তোষামোদি আচরণ পরিহার করা
  • আইনত প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা হতে কাউকে বঞ্চিত না করা।
  • উধ্বর্তন কর্মকর্তার সামনে আগ বাড়িয়ে কথা না বলা।
  • কোন ব্যক্তিবিশেষ এর প্রতি অতিরিক্ত পছন্দ বা অপছন্দ প্রদর্শন না করা।
  • চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা
  • নিজের যোগ্যতা প্রমাণে বাড়াবাড়ি হতে বিরত থাকা
  • অধস্তনদের তিক্ত যা বিদ্রুপাত্মক(mordant) শব্দ বা গালি না দেওয়া।
  • মনযোগ দিয়ে সকলের কথা শোনা।

পত্র লিখনে শিষ্টাচার

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র লিখার ক্ষেত্রে যথাযথ সম্মান ও বিনয় প্রকাশ করতে হয় । বক্তব্য সুস্পষ্ট হওয়া বাঞ্চনীয় । অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য, তোষামোদ, ভুল তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে হবে।


পোশাক পরিচ্ছদে শিষ্টাচার

অফিস আদালতে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে যোগদানকালে সকল কর্মচারীকে পোশাক সংক্রান্ত বিধিমালা অনুসরণ শিষ্টাচারের অঙ্গ। একজন সরকারী কর্মচারীর মার্জিত ও রুচিসম্মত পোশাক পরিধান করা হচ্ছে ঐতিহ্যগত। সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদের পেশাগত ও বাণিজ্যিক মূল্য ছাড়াও যথেষ্ঠ সামাজিক মূল্য রয়েছে। এটি একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। পোশাক-পরিচ্ছেদ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে দাপ্তরিক শিষ্টাচার—

  • শালীন ও শোভন পোশাক পরিধান।
  • নিয়মিত গোসল করা।
  • শেভ করা বা দাড়ি রাখলে তা পরিপাটি রাখা।
  • মুখের দুর্গত হতে মুক্ত থাকা।
  • উৎকট গন্ধযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করা।
  • মানানসই জুতা পরিধান
  • জুতার ফিতা থাকলে তা ঠিকমত বাঁধতে হবে
  • পুরুষদের অলংকার ব্যবহার না করা, নারীদের
  • হালকা অলংকার ব্যবহার
  • হালকা বা মার্জিত রঙের কাপড় পরিধান করা


নৈমিত্তিক সরকারী পোশাক

নৈমিত্তিক সরকারি কাজে নিম্নলিখিত পোশাক পরিধান করতে হবে-

সাফারী স্যুট (অর্ধ/পুরা হাতা) অথবা ট্রাউজার ও বুশ শার্ট (অর্ধ/পুরা হাতা) অথবা ট্রাউজার ও ট্রাউজারের ভিতরে গুটানো শার্ট (অর্ধ/পুরা হাতা) অথবা কমবিনেশন স্যুট অথবা শেরওয়ানীর সাথে পায়জামা বা ট্রাউজার। কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ও ক্রীড়া সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে পোশাক সংক্রান্ত বিধিমালা শিথিলযোগ্য। মহিলাদের সালোয়ার কামিজ ব্যবহার না করাই ভাল, তবে ব্যবহার করা দূষণীয় নয়।


পোশাক সম্পর্কে যা বর্জনীয়

ক. চপ্পল, স্যান্ডেল বা মোজা ছাড়া জুতা পরা।

খ. পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে/পরিধান করে অফিসে আসা (পায়জামা-পাঞ্জাবী পরলে আচকান পরতে হবে)।

গ. সাধারণত খেয়াল খুশি মত রং চং এর পোশাক পরা।

ঘ. ফুলহাতা শার্টের আস্তিন গুটানো।

ঙ. শার্টের বুকের উপরের দিকের বেতাম এমনভাবে খোলা রাখা যাতে গেঞ্জি বা বুকের অংশ বিশেষ দেখা যায় ।

চ. অপরিচ্ছন্ন বা দুমড়ানো-মুচড়ানো পোশাক পরা ।



সহকর্মীদের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক শিষ্টাচার

  • কোন সাহায্যের জন্য 'প্লিজ' বলে অনুরোধ করা।
  • কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ধন্যবাদ জানানো।
  • যেকোন ভুলের জন্য 'সরি' বা 'দুঃখিত' বলা।
  • একে অপরকে সম্মান করা।
  • অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা না রটানো।
  • নারী সহকর্মীদের সাথে শালীন আচরণ করা।
  • জুনিয়াদের প্রতি স্নেহাম্মদ আচরণ করা।
  • সিনিয়রদের সম্মান প্রদর্শন।
  • সমপর্যায়ের সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিকতা পোষণ করা।
  • পরস্পরকে সহায়তা করা।
  • কাউকে মন্দ নামে না ডাকা।
  • অতিরিক্ত ঠাট্টা-মশকরা হতে বিরত থাকা

মিটিং বা সভার ক্ষেত্রে দাপ্তরিক শিষ্টাচার 

  • সময়মত সভায় উপস্থিত হওয়া।
  • সভার বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে আসা।
  • শারীরিক ও মানসিকভাবে সভায় উপস্থিত থাকা।
  • মুক্তমনে সভার আলোচনা শোনা।
  • আলোচনায় অংশগ্রহণ করা।
  • অন্যকে সভায় অংশগ্রহণে সহায়তা করা।
  • ভেবে-চিন্তে কথা বলা।
  • কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমন না করা।
  • মিটিং বা সভার আলোচ্য বিষয়ে নোট নেয়া।
  • সভার বিষয়ে কথা বলা।
  • সময়ের দিকে খেয়াল রেখে আলোচনা করা।
  • শুধু সমস্যা নয় সমাধানের কথাও বলা।
  • মিটিং-এ যথাসম্ভব মোবাইলে কথা না বলা।
  • বসা অবস্থায় কলম, চাবির রিং নাড়াচাড়া না করা।
  • সভাপতির অনুমতি নিয়ে কথা বলা।
  • সভা চলাকালীন সময়ে যেকোন পানাহার থেকে বিরত থাকা
  • যুক্তি সহকারে বক্তব্য উপস্থাপন করা।
  • মিটিংয়ে চা নাস্তা পরিবেশিত হলে সাথে সাথেই খাওয়া শুরু না করা।


টেলিফোন বা ইন্টারকম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিষ্টাচার
  • সালাম দিয়ে কথা শুরু করা।
  • টেলিফোনে শুরুতেই নিজের পরিচয় দেওয়া।
  • আলাপ সংক্ষিপ্ত করা।
  • অধৈর্ষ বা বিরক্তি প্রকাশ করে কথা না বলা।
  • ধৈর্য সহকারে বক্তব্য শ্রবণ করা।
  • টেলিফোনে কল চলাকালে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
  • মিসড কলের প্রতিউত্তরে কল করা।
  • মেসেজ এর প্রতিউত্তরে মেসেজ দেয়া।
  • রং নাম্বার এর ক্ষেত্রে শান্তভাবে কলকারীকে জানানো।
  • উত্তেজিত হয়ে কথা না বলা
মূলকথা শিষ্টাচার—
  • মানুষকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠতে সাহায্য করে।
  • শিষ্টাচারে প্রাপ্তি বেশি।
  • শিষ্টাচারের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করা যায়।
  • সহজ সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে

ক্রেডিট- জনাব মোঃ-ইসমাইল-হোসেন
              উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
             সোনাইমুড়ী উপজেলা, নোয়াখালী

Post a Comment

0 Comments